মহানবীর
আদর্শ জীবন

Mohanobir Jiboni
বিডিওয়াপমাস্টার

মহানবীর
আদর্শ জীবন

ভূমিকা



হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (৫৭০ – ৬৩২); ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল (আরবি ভাষায়: النبي আন-নাবিয়্যু) তথা "বার্তাবাহক" (আরবি: الرسول আর-রাসুল) যাঁর উপর আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

অমুসলিমদের মতে, তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞের মতে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনে। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য। বিবদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের পূর্বে আরবের অবস্থা



আরব বলতে এখানে মক্কা ও মদিনা এবং এদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো নিয়ে গড়ে ওঠা অংশকে বুঝানো হচ্ছে, কারণ এই অংশের সাথেই হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল। অঞ্চলটি ছিল মরুভূমির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দ্বীপের মত। অবশ্য মরুভূমি পৃথিবীর সর্বত্রই রয়েছে, অর্থাৎ মরুভূমি ও ইসলামের মধ্যে বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রভাব মূল্যায়নের জন্য তাঁর জন্মের পূর্বে আরবের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং নৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

তৎকালীন আরবের লোকেরা শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল। তারা পবিত্র কাবা শরীফে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। এগুলোর মধ্যে হুবালকে তারা প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করতো। আরবের সে সময়কে বলা হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। সেটি ছিল অজ্ঞতা, বর্বরতা ও অসভ্যতার যুগ। নারীর চরম অবমাননা, ব্যভিচার, দাসপ্রথা, কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া, জুয়াখেলা ও মদ্যপানের ব্যাপকতা, গোত্রসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বেহায়াপনা, অশ্লীল সাহিত্যের বিস্তার, কুসংস্কার সহ নানা অপকর্মে ডুবে ছিল তখনকার সমাজ।

আরব অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন। নোমেডীয় অঞ্চলের সাথে এখানকার বাণিজ্য যোগাযোগ ছিল।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মহানবীর বংশ পরিচয়



রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশ সারা বিশ্বের সেরা ও উত্তম বংশ। আপন পর সবাই অকপটে তা স্বীকার করত। আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোচ্চ বংশোদ্ভুত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাঁর রিসালাত বা পয়গামের দায়িত্ব কাকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে অনেক জ্ঞাত।” (সূরা আন আমঃ ১২৪)

আবু সুফিয়ান (ইসলাম গ্রহনের পূর্বে) যখন রোমের সম্রাটের কাছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিচয় দিচ্ছিল তখন সেও বলেছিল যে, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশীয় ব্যক্তি। তখন রোম সম্রাট হিরাকল বলেছিলেনঃ “তেমনি নবী রাসুলগণ সর্বোচ্চ বংশ ও গোত্রে প্রেরিত হয়ে থাকেন।” (সহীহ সীরাতুন নব্বীয়াহ, পৃঃ ৯)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেনঃ “আমি বনী আদমের সর্বোত্তম বংশে প্রেরিত হয়েছি। আমার যুগই সর্বশেষ্ঠ যুগ।” (সহীহ আল বুখারীঃ ৪/১৫১)

অপর এক হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা কিনানা গোত্র থেকে কুরাইশকে বাছাই করেন, আবার কুরাইশদের থেকে বনু হাশিমকে বাছাই করেন এবং বনু হাশিম থেকে আমাকে বাছাই করেন।” (মুসলিম (২২৭৬), তিরমিযী (৩৬০৬), মুসনাদে আহমদঃ ৮/১০৭, হা/ ১৭১১১, সিলসিলা সহীহাঃ ৩০২)

মহানবীর
আদর্শ জীবন

রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র বংশধারা



রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বংশধারা নিম্নরূপঃ

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনে আব্দিল্লাহ, ইবনে আব্দিল মুত্তালিব, ইবনে হাশিম, ইবনে আব্দিমানাফ, ইবনে কুছাই, ইবনে কিলাব, ইবনে মুররাহ, ইবনে কাআ’ব, ইবনে লুওয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফেহের (কুরাইশ), ইবনে মালিক, ইবনে নযর, ইবনে কিনানা, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে মুদরিকাহ, ইবনে ইলিয়াস, ইবনে মুদ্বার, ইবনে নাযার, ইবনে মাআ’দ, ইবনে আদনান, ইবনে আদু, ইবনে মাইসা’, ইবনে সালামান, ইবনে এওয়ায, ইবনে বূয, ইবনে ক্বামওয়াল, ইবনে উবাই, ইবনে আওয়াম, ইবনে নাশিদ, ইবনে হাযা, ইবনে বিলদাস, ইবনে ইয়াদলাফ, ইবনু ত্বাবিখ, ইবনু জাহিম, ইবনু নাহিশ, ইবনু মাখী, ইবনু আইফী, ইবনু আবকার, ইবনু উবাইদ, ইবনু আলদুআ’, ইবনু হামদান, ইবনু সাবজ, ইবনু ইয়াসরাবী, ইবনু ইয়াহযান, ইবনু ইয়ালহান, ইবনু আরআওয়া, ইবনু আইফা, ইবনু যীশান, ইবনু আইসার, ইবনু আকনাদ, ইবনু ইহাম, ইবনু মুকছির, ইবনু নাহিছ, ইবনু যরাহ, ইবনু সুমাই, ইবনু মযযী, ইবনু ইওয়ায, ইবনু আরাম, ইবনু কায়দার, ইবনু ইসমাঈল, ইবনু ইবরাহীম, ইবনু তারা (আযর), ইবনু নাহুর, ইবনু সারুজ, ইবনু রাঊ, ইবনু ফাইজ, ইবনু আবির, ইবনু আরফাকশাও, ইবনু সাম, ইবনু নূহ, ইবনু লামক, ইবনু নাতুশাইহ, ইবনু আখনূ’, ইবনু ইদ্রিস, ইবনু ইয়ারিদ, ইবনু মালহালঈল, ইবনু কায়নান, ইবনু আনূশ, ইবনু শীছ, ইবনু আদম আলাইহিস সালাম। (রাহমাতুল্লিল আলামীন, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ২৫-৩১, কাজী মুহাম্মদ সুলাইমান মনছুরপুরী)

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা পর্যন্ত নারী পুরুষের যতগুলি স্তর রয়েছে প্রত্যেক স্তরের প্রতিটি নারী ও পুরুষ সৎ ও পবিত্র ছিলেন। কেউ কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হননি।

রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি বিবাহের মাধ্যমে জন্ম গ্রহন করেছি, ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমার পিতা-মাতা পর্যন্ত কোন নারী-পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হননি। আর জাহেলী যুগের ব্যভিচার আমাকে স্পর্শ করেনি।” (ইরওয়াউল গালীলঃ ১৯৭২, সহীহুল জামিউস সাগীরঃ ৩২২৫)

মহানবীর
আদর্শ জীবন

নবীজীর পিতা- মাতা



কুরাইশ সর্দার আব্দুল মুত্তালিবের ছিল দশ পুত্র। এদের সকলেই ছিলেন বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান। তার সকল পুত্রের মধ্যে আব্দুল্লাহ খুবই প্রশংসনীয় গুণাবলি ও কেন্দ্রীয় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তার পিতা তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন বনু যুহরার সর্দার ওহাব এর কন্যা আমেনার সঙ্গে, যাকে সে সময় উচ্চ বংশ, সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কুরাইশদের ভিতর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলা মনে করা হত।

রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি সিরিয়া সফর থেকে ফেরার পথে মদীনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তথায় মৃত্যু বরণ করেন। ‘দার আল নাবেগা আলজা’দী’ নামক স্থানে তাকে দাফন করা হয়। (আর রাহীকুল মাখতুম, ছফীউর রাহমান মুবারকপুরী, পৃঃ ৫৩)

নবীজীর মাতা আমেনা তাঁর জন্মের পূর্বেই এমন বহু নিদর্শন দেখতে পান যা দ্বারা বোঝা যেত যে, তার সন্তানের ভবিষ্যৎ অত্যুজ্জল ও মর্যাদাকর হবে। (নবীয়ে রহমত- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী- ১১৩)

মহানবীর
আদর্শ জীবন

জন্ম



রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ হস্তী বাহিনীর অভিযানের বছর প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে রবিউল আউয়াল মাসের ১৭ তারিখ মুতাবিক ৫৭০ খৃষ্টাব্দে শুক্রবার দিন সকালে জন্মগ্রহণ করেন। এটি ছিল মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকোজ্জ্বল ও বরকতময় দিন।

উল্লেখ্য যে, রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইতিহাস গ্রন্থসমূহে অনেক উক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেনঃ “ইমাম মালিক ও অন্যান্য মুহাদ্দিসরা মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুত্ইম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল, রবিউল আউয়ালের ৮ তারিখ। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মূছা আল খাওয়ারযমী এ উক্তিকে অকাট্য বলেছেন। আর ইবনে দেহয়াহ এ উক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।”(সহীহুস সীরাতিন নববীয়্যাহ, টীকা, পৃঃ ১৩।)

মিসরের প্রসিদ্ধ গণিতশাস্ত্র বিশারদ মাহমূদ পাশা একটি পুস্তিকা রচনা করেন যাতে তিনি গণিত বিদ্যার অকাট্য দলীল প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল রবিউল আউয়ালের ৯ তারিখ মুতাবিক ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল। (সীরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী পৃঃ ১০৮)

মহানবীর
আদর্শ জীবন

নামকরণ



হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হতেই মা আমেনা এ সংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। সংবাদ পেতেই তিনি ছুটে আসেন, পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গে কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। আরবে এ নাম ছিল একেবারেই নতুন। ফলে লোকেরা খুব বিস্মিত হয়। (সীরাতে ইবনে হিশামঃ ১/১৫৯-৬০, ইবনু কাছীরঃ ১/২১০)

যুবাইর ইবনে মুতায়িম থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি মুহাম্মদ, আহমদ, হাশির, আকিব, মাহি এবং খাতম।” (মুসনাদে আহমদঃ ৪/৮১, ৮৪/ ১৬৮৬৯, ১৬৮৯২)

মহানবীর
আদর্শ জীবন

শৈশব ও কৈশোর কাল



তৎকালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন। এই রীতি অনুসারে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়।

এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন। তখনকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য - শিশু হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু  হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল। এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে - একদিন শিশু নবী (সাঃ) এর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে বক্ষ বিদারণ বা সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।

এই ঘটনার পরই হালিমা হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। আমিনা ছেলে, শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের (সাঃ) দেখাশোনা করতে থাকেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দায়িত্ব দিয়ে যান।

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ১২ বছর, তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেন না। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবী (সাঃ) এর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটা করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

নবুওয়ত-পূর্ব জীবন



আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানত প্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই যুবক মুহাম্মাদ (সাঃ) হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

'হিলফুল ফুজুল' অর্থ শান্তিসংঘ। নবুয়তপ্রাপ্তির ১৫ বছর আগে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি আরব সমাজের সব অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে তাঁর সমবয়সী কিছু যুবককে নিয়ে এ শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তরুণ বয়সে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তেমন কোন পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন। সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা'দ গোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অল্প সময়ের মধ্যেই এ কাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী

ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদীজা (রাঃ) এর পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

খাদীজা (রাঃ) মাইছারার মুখে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংসা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসায়ের সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপারে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানাবেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদীজার (রাঃ) বয়স ছিল ৪০ আর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ছিল ২৫; খাদীজার (রাঃ) জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি।

খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম, যয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম', ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে এবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে।

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা'বা গৃহের পুনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল। যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

নবুওয়ত প্রাপ্তি



চল্লিশ বছর বয়সে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ এই সময়েই আল্লাহ তার কাছে ওহী প্রেরণ করেন। নবুওয়ত সম্বন্ধে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় আজ-জুহরির বর্ণনায়। জুহরি বর্ণিত হাদীস অনুসারে নবী সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) তার কাছে আল্লাহর প্রেরিত ওহী নিয়ে আসেন। জিব্রাইল (আঃ) তাঁকে এই পঙক্তি ক’টি পড়তে বলেনঃ

পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।

উত্তরে নবী (সাঃ) জানান যে তিনি পড়তে জানেন না। তখন জিব্রাইল (আঃ) তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন।

এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। অবর্তীর্ণ হয় কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। প্রথম অবতরণের পর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাবেন, "আমাকে আবৃত কর"; খাদিজা হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যান।

নওফেল তাঁকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে। ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতির পর তাঁর কাছে দ্বিতীয় বারের মত ওহী আসে। এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত। এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই ইসলাম ছিল জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার জন্য প্রেরিত একটি আদর্শ ব্যবস্থা। তাই এর প্রতিষ্ঠার পথ ছিল খুবই কঠিন। এই প্রতিকূলতার মধ্যেই নবীর (সাঃ) মক্কী জীবন শুরু হয়।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মক্কী জীবন



নবুওয়ত ও রিসালাত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ পাক রাসূল (সাঃ)-এর ওপর এক বিরাট দায়িত্ব চাপিয়ে দিলেন। এখান থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনের সংগ্রামী পর্যায় শুরু হলো। এ পর্যায়কে ঐতিহাসিকগণ দু’টি বড় বড় অংশে ভাগ করেছেন। হিজরতের পূর্বে মক্কায় অতিবাহিত অংশ; যাকে বলা হয় মক্কী পর্যায়। আর হিজরতের পর মদীনায় অতিক্রান্ত অংশ; একে বলা হয় মাদানী পর্যায়। প্রথম পর্যায় ১৩ বছর এবং দ্বিতীয় পর্যায় প্রায় ১০ বছরকাল ছিলো।

মক্কী পর্যায় মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সংগ্রামী জীবনের নিজস্ব পরিণতির দিক দিয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে এই পর্যায়েই ইসলামের ক্ষেত্র কর্ষিত হয়। এ পর্যায়ে মাবনবতার এমন সব উন্নত নমুনা তৈরী হয়, যাদের কল্যাণে পরবর্তীকালে ইসলামী আন্দোলন সারা দুনিয়ার বুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এ পর্যায়ের গুরুত্ব এবং এর শিক্ষামূলক ঘটনাবলি অনুধাবন করতে হলে কুরআনের মক্কী অংশ গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

গোপনে ইসলাম প্রচার



ওহী বা প্রত্যাদেশ অবতরণের পর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভিত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোন উপায় ছিলনা। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন।

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আহবানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন খাদিজা (রাঃ)। এরপর মুসলিম হন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী (রাঃ), ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন; এই সভায় কেউই তাঁর আদর্শ মেনে নেয়নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো আলী (রাঃ)। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর (রাঃ)। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

প্রকাশ্য দাওয়াত



তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআ’লার আদেশে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা পর্বতের ওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল।”

কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায় এবং এই সময় থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন



বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নির্যাতন শুরু করে: প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কূটতর্ক এবং যুক্তি। এক সময় ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয় যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচক ফ্রন্ট গড়ে উঠে। একই সাথে গড়ে তোলা হয় সাহিত্য ও অশ্লীল গান-বাজনার ফ্রন্ট, এমনকি এক পর্যায়ে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আপোষেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা মেনে নেননি; কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মত ইসলাম পালন করা, সেক্ষেত্রে তাঁর ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ভেস্তে যেতো।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

ইথিওপিয়া বা আবিসিনিয়ায় হিজরত



ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ



এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল উমর ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ। নবী (সাঃ) সবসময় চাইতেন যেন আবু জেহেল ও উমরের (রাঃ) মধ্যে যে কোন একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। তার এই ইচ্ছা এতে পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের (রাঃ) বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবেচিত হচ্ছিল। এরপর একসময় নবীর চাচা হামযা (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

বনু হাশিমের একঘরে অবস্থা



এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার অনুসারীদের সহ গোটা বনু হাশেম গোত্রকে শিয়াবে আবু তালেব নামক উপত্যকায় একঘরে ও আটক করে। তিন বছর আটক থাকার পর তারা মুক্তি পায়।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন



শিয়াবে আবু তালেব থেকে মুক্তির পরের বছরটি ছিল হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি নির্যাতনের শিকার হন।

এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি; নব নব সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মি'রাজ তথা ঊর্ধ্বারোহণ



এমন সময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে, এ সময় হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাতে (৬২০ সাল) মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান। এই ভ্রমণ ইতিহাসে ‘ইসরা’ নামে পরিচিত। মসজিদুল আকসা থেকে তিনি বোরাক নামক একটি বিশেষ যানে করে ঊর্ধ্বারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন। এছাড়া তিনি বেহেশত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা ইসলামের ইতিহাসে মি'রাজ নামে পরিচিত। এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ই অতিবাহিত হয়নি।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মদীনায় হিজরত



মদীনার বেশকিছু লোক ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। তারা মূলত হজ্জ্ব করতে এসে ইসলামের দাওয়াত পেয়েছিল। এরা হেরা ও মিনার মধ্যবর্তী আকাবা নামক স্থানে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে শপথ করে যে, তারা যে কোন অবস্থায় নবী (সাঃ) কে রক্ষা করবে এবং ইসলামের প্রসারে কাজ করবে। এই শপথগুলো আকাবার শপথ নামে সুপরিচিত।

এই শপথগুলোর মাধ্যমেই মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং একসময় মদীনার ১২ টি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের মাধ্যমে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে মদীনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। মদীনা তথা ইয়াসরিবে অনেক আগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্র গোত্র এবং ইহুদীদের সাথে অন্যদের যুদ্ধ লেগে থাকতো। বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধে সবগুলো গোত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ায় প্রচুর রক্তপাত ঘটে। এ থেকে মদীনার লোকেরা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নেয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতে পারেনা। এজন্য তাদের একজন নেতা দরকার যে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে।

এ চিন্তা থেকেই তারা হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকেই তখনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে যায়।

সবশেষে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর (রাঃ) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরত করেন। তাদের হিজরতের দিনেই কুরাইশরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যদিও তা সফল হয়নি। এভাবেই মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে। যারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল তারা "মুহাজিরুন" বা মুহাজির নামে পরিচিত হয়ে উঠল।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মাদানী জীবন



নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রের সাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবে পরিগণিত হত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকম নয়, কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধন হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হত। এটি তখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়। ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামী পঞ্জিকার বর্ষের শেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ: After Hijra।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান প্রণয়ণ



হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করেছিলেন। মদীনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদীনা সনদ স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদী গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির); এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। এই সনদের মাধ্যমে মদীনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হন তার প্রধান।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধ



মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় এসে আশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকল মুসলিমের সম্পত্তি ক্রোক করে। এই অবস্থায় ৬২৪ সালে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠান। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়। আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তা করেছিলেন। যাই হোক, এই সময় থেকেই ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে।

এরপর ৬২৫ সালের ২৩ মার্চ উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটি ছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রথম দিকে মুসলিমরা সুবিধাজনক স্থানে থাকলেও এক পর্যায়ে যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ কুরাইশদের হাতে চলে যায়। বিশৃখল অবস্থায় পড়ে যাওয়া মুসলিমরা এরপর পর্বতে জমায়েত হতে সক্ষম হয়। কুরাইশরা এরপর আর অগ্রসর হয়নি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ীদের তিনদিন অবস্থানের তৎকালীন রীতি পালন না করে ফিরে যায়। ফলে শেষপর্যায়ে মুসলিমদের তুলনামূলক বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও কুরাইশদের সুবিধাজনক অবস্থান সত্ত্বেও যুদ্ধের ফলাফল অমীমাংসিত রয়ে যায়।

৬২৭ সালে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মদিনার বাইরে খন্দক বা পরিখা খনন করার ফলে যুদ্ধের এরূপ নাম প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এই যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ বলা হয় যার অর্থ জোটের যুদ্ধ। মূলত, উহুদের যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এসময় ২৭ দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। জোট বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০ এবং সেই সাথে তাদের ৬০০ ঘোড়া ও কিছু উট ছিল। অন্যদিকে মদিনার বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ছিল ৩,০০০।

জোটবাহিনীর যুদ্ধযাত্রার খবর মদিনায় মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে পৌছায়। তাই গৃহিতব্য পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি সভা আহবান করেন। সভায় বদরের মত খোলা ময়দানে লড়াই এবং উহুদের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শহরের ভেতর থেকে প্রতিরক্ষা উভয় প্রকার মতামত উঠে আসে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির (রাঃ) পরামর্শে মুহাম্মাদ (সাঃ) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন।

আরবীয় যুদ্ধকৌশলে পরিখা খনন প্রচলিত ছিল না। তাই মুসলিমদের খননকৃত পরিখার কারণে জোটবাহিনী অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণকারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কুরাইজা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়। জোটবাহিনী পিছু হটে ও মদীনা অবরোধমুক্ত হয়।

এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসলাম পূর্বের চেয়ে আরো বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠে।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মদীনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক



খন্দকের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর মুসলিমরা আরবের একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। কিন্তু এ সময় মদীনার বসবাসকারী ইহুদীরা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়।

মূলত ইহুদীরা বিশ্বাস করতো না যে, একজন অ-ইহুদী শেষ নবী হতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয়নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটি করে ইহুদী গোত্রের উপর আক্রমণ করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনু কাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকল ইহুদীকে মদীনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে দু’টি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক। ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবীকে মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে, ইহুদীরা মদীনার জন্য একটি হুমকি ও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

হুদাইবিয়ার সন্ধি



কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জ্বের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ করা আছে, তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ্ব আদায় করতে পারছিল না। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক দিব্য দর্শনে দেখতে পান তিনি হজ্জ্বের জন্য মাথা কামাচ্ছেন। এ দেখে তিনি হজ্জ্ব করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মদীনার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাঁধা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেলেও হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ



হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং, পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহবান পৌছে দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে তিনি এ কাজে মনোনিবেশ করেন। সেসময় পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য, এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের 'আযীয মুকাউকিস', ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একই দিনে এদের কাছে ইসলামের আহবানপত্র সহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।

প্রেরিত দূতগণের তালিকাঃ

১। দাহিয়া ক্বালবী (রাঃ) কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে।

২। আবদুল্লাহ বিন হুযাফা (রাঃ) কে পারস্যসম্রাট পারভেজের কাছে।

৩। হাতিব বিন আবূ বুলতা'আ (রাঃ) কে মিশরৈর শাসনকর্তার কাছে।

৪। আমর বিন উমাইয়া (রাঃ) কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে।

৫। সলীত বিন উমর বিন আবদে শামস (রাঃ) কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।

৬। শুজা ইবনে ওয়াহাব আসাদী (রাঃ) কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।

শাসকদের মধ্য হতে শুধুমাত্র বাদশাহ নাজ্জাশী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মক্কা বিজয়



দশ বছর মেয়াদি হুদাইবিয়ার সন্ধি মাত্র দু' বছর পরেই ভেঙ্গে যায়। খুযাআহ গোত্র ছিল মুসলমানদের মিত্র, অপরদিকে তাদের শত্রু বকর গোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র। একরাতে বকর গোত্র খুযাআদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। কুরাইশরা এই আক্রমণে অন্যায়ভাবে বকর গোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সহয়োগিতা করে। কোন কোন বর্ণনামতে কুরাইশদের কিছু যুবকও এই হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনার পর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ পত্র প্রেরণ করেন এবং কুরাইশদেরকে এই তিনটি শর্তের যে কোন একটি মেনে নিতে বলেন। শর্ত তিনটি হলোঃ

কুরাইশরা জানালো যে, তারা শুধু তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করবে। কিন্তু খুব দ্রুত কুরাইশরা তাদের ভুল বুঝতে পারলো এবং আবু সুফিয়ানকে সন্ধি নবায়নের জন্য দূত হিসেবে মদীনায় প্রেরণ করলো। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং মক্কা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করলেন।

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন। সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনা প্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন। তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। তবে দশজন নর এবং নারী এই ক্ষমার বাইরে ছিল। তারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুৎসা রটাত। তবে এদের মধ্য হতেও পরবর্তীতে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়।

মক্কায় প্রবেশ করেই হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম কাবাঘরে আগমন করেন এবং সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস করেন। মুসলমানদের শান-শওকত দেখে এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করে। কোরআনে এই বিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

বিদায়ী হজ্জ



নবম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়। আর তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দশম হিজরীতে নবী কারীম (সাঃ) হজ্জ আদায় করলেন। অন্তত এক লক্ষ মুসলমান তাঁর সঙ্গে হজ্জ আদায় করেন। এটিই ছিল হাজ্জাতুল বিদা বা বিদায়ী হজ্জ।

বিদায় হজ্জের ভাষণ

জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে মহানবী (সাঃ) আরাফাতের বিশাল ময়দানে উপস্থিত প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার সাহাবীর সম্মুখে জীবনের অন্তিম ভাষণ দান করেন, যা বিশ্বনবী (সাঃ) এর 'বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ' নামে পরিচিত। উক্ত ভাষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে উল্লেখ করা হলোঃ

১। ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করাঃ হে মানবমন্ডলী, তোমরা আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর, আমি তোমাদের জন্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় বর্ণনা করছি। আগামী বছর আমি এ স্থানে তোমাদের সাথে পুনরায় নাও মিলিত হতে পারি।

২। দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঃ হে বন্ধুগণ, স্মরণ রেখ, আজকের এ (জুম্মার) দিনে এই (জিলহ্জ) মাস এবং এ পবিত্র (মক্কা) নগরী তোমাদের নিকট যেমন পবিত্র তেমনি পবিত্র তোমাদের সকলের জীবন, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের রক্ত এবং তোমাদের মান-মর্যাদা তোমাদের পরস্পরের নিকট। তোমরা যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিন অন্যের ওপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।

৩। আমানতের খেয়ানত না করাঃ যে ব্যক্তি অন্যের ধন-সম্পদের অভিভাবক বা আমানতদার, তার উচিত সম্পদের প্রকৃত মালিককে যথাযথভাবে তা পৌছে দেয়া।

৪। সুদ নিষিদ্ধকরণঃ এখন থেকে সুদ দেয়া নেয়া হারাম করা হলো। আর এ উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম আমার চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের সমুদয় সুদ বাতিল ঘোষণা করা হল।

৫। নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠাকরণঃ হে লোক সকল, মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের ওপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তোমাদের ওপরও তাদের তেমন অধিকার রয়েছে। তোমাদের স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খেতে দিবে, তোমরা যা পরিধান করবে, তাদেরকে তাই পরিধান করতে দিবে। ভুলে যেওনা যে, তোমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তাদেরকে তোমাদের জীবন সংগিনী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছ।

৬। জুলুম নির্যাতন বন্ধকরণঃ তোমরা কারো প্রতি জুলুম করবে না। এটা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয় যে, অনুমতি ব্যতিরেকে একে অন্যের সম্পদ গ্রহণ করবে।

৭। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাকরণঃ হে মানবমন্ডলী, তোমরা একের অন্যায়ে অন্যকে দায়ী করবে না। পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে দায়ী করবে না।

৮। আভিজাত্যের গর্ব রহিতকরণঃ হে লোক সকল! মনে রেখ, কোন অনারবের ওপর আরবের এবং কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোন প্রাধান্য নেই এবং তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যিনি বেশি তাকওয়া অবলম্বনকারী।

৯। সাম্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব প্রদানঃ হে লোকসকল! মনে রেখ সব মুসলমান ভাই ভাই। তোমাদের প্রভু এক, তোমরা সবাই এক আদম (আঃ) এর সন্তান। তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারে তোমরা সকলে সমান পরিগণিত হবে।

১০। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধকরণঃ সাবধান, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। এ বাড়াবাড়ির কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

১১। রক্তপাত নিষিদ্ধকরণঃ তোমরা ঝগড়া ও রক্তপাতে লিপ্ত হইওনা। মনে রেখ, তোমরা পরস্পর ভাই ভাই। সমগ্র বিশ্বের মুসলমান এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ।

১২। নবুয়তের পথরুদ্ধকরণঃ মনে রাখবে আমার পর আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। তোমাদের পর আর কোন উম্মত আসবে না।

১৩। শিরক নিষিদ্ধকরণঃ ৪টি উপদেশ মনে রাখবে। শিরক করবে না, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে না, চুরি করবে না এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হবে না। এছাড়া একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত আর কারো সামনে মাথা নত করবে না।

১৪। শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠাঃ হে লোক সকল! দুর্বলের ওপর অত্যাচার করবে না। সাবধান! শ্রমিকের মাথার ঘাম শুকাবার পূর্বেই তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দিবে।

১৫। ঘুষ নিষিদ্ধকরণঃ তোমরা ঘুষ দেয়া ও নেয়া থেকে বিরত থাকবে। এটা মহাপাপ।

১৬। হিংসা পরিহারকরণঃ তোমরা হিংসা পরিহার করবে। মনে রাখবে হিংসা মানুষের সৎ গুণগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।

১৭। শ্রমের মর্যাদাঃ মনে রাখবে নিজ হাতে উপার্জন করা সম্পদ থেকে উত্তম সম্পদ আর নেই।

১৮। জ্ঞান অর্জনের গুরুত্বারোপঃ মনে রেখ, বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্ত অপেক্ষা মূল্যবান। তোমরা জ্ঞান অনুসন্ধান কর। জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর অবশ্য কর্তব্য।

১৯। প্রতিবেশীর অধিকারঃ হে লোক সকল, মনে রেখ যে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে সে প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। সমাজে অন্যদের প্রতি সে রকম আচরণ করবে, যে রকম আচরণ তোমরা নিজেরাও কামনা করে থাক।

২০। পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহারঃ হে মানবমন্ডলী, মনে রেখ, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিই আল্লাহ সন্তুষ্টি। তোমাদের বেহেশত তোমাদের মাতার পদতলে।

২১। মানবতার সেবা সম্পর্কেঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে মানুষের উপকার করে।

২২। আল্লাহকে ভয় করাঃ হে লোক সকল, তোমরা সাবধান থেকো। পরকালে কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না। তোমাদের প্রতিটি কৃতকর্মের হিসাব আল্লাহর দরবারে অবশ্যই দিতে হবে। সুতরাং মানব জীবন ও সামাজিক মূল্যবোধের কথা বিবেচনা করে কোন অবস্থাতেই দুর্বল ও অসহায়ের ওপর নির্যাতন করবে না। তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে।

২৩. পথভ্রষ্ট না হবার উপায়ঃ হে বন্ধুগণ, আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। যতদিন এ দুটি বস্তুকে আকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হল পবিত্র কুরআন, আর অপরটি হল আমার সুন্নাহ।

২৪. বিশেষ উপদেশঃ আর একটি বিশেষ উপদেশ হলো তোমরা পাচঁ ওয়াক্ত নামায কায়েম করবে, রমযান মাসে রোজা রাখবে, যাকাত আদায় করবে, হজ্জ সম্পাদন করবে এবং শাসন কর্তার নির্দেশ মেনে চলবে। হে বন্ধুগণ, যারা এখানে উপস্থিত আছো, তারা আমার এ পয়গাম অনুপস্থিতগনের নিকট পৌছে দিবে।

উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ন ভাষণ দেয়ার পর বিশ্বনবী (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি রিসালাতের গুরুভার বহন করতে পেরেছি? আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি? তখন উপস্থিত জনগণ উচ্চস্বরে বললেন, হ্যাঁ। এরপর আল্লাহর নবী (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থেকো।

তখন কুরআনের শেষ আয়াত অবতীর্ণ হয়—আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম—আজকের দিনে ইসলামকে আমি পরিপূর্ণ করে দিলাম।

এরপর তিনি উপস্থিত জনমণ্ডলীকে লক্ষ্য করে বললেন- বিদায়! বিদায়!! বিদায়!!!

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মৃত্যু



বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ) এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল, মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন।

বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ (মতান্তরে ২ বা ১২ তারিখ) সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী (রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশা (রাঃ) এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফন করা হয়।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

মহানবীর (সাঃ) চরিত্র



রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও সৃষ্টির সেরা মানব। তাঁর চরিত্রে ছিল সব ধরনের মহৎ গুণের মধুর সমন্বয়। নিরক্ষর হয়েও তিনি ছিলেন মহাবিজ্ঞ, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সকল জ্ঞানের মহান উৎস, জগতের মহাশিক্ষকদের সেরা। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

অসত্যের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম ও সত্যপ্রচারে একাকী হয়েও চরম বিপদে তিনি ছিলেন অবিচল। এক বিস্তীর্ণ রাজ্যের অধিপতি হয়েও তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর। বিশ্বস্ততা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় অটল, সংসারী হয়েও মহাত্যাগী।

তিনি ছিলেন প্রেমময় স্বামী, স্নেহশীল পিতা, অকৃত্রিম বন্ধু, ঘোর শত্রুর প্রতি ক্ষমাশীল। তাঁর অটল আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় সঙ্কল্প ও দূরদর্শিতার নজির জগতে বিরল।

‘‘ধর্মে বল প্রয়োগ নাই’’, ‘‘বিজ্ঞতা ও উত্তম উপদেশ দ্বারা তোমাদের প্রভুর নিকট আহবান কর’’, কুরআনের এমন মহান উদার বাণী ছিল তাঁর প্রচারের মূলসূত্র।

ইয়াতিম, আর্ত ও দরিদ্রের সেবা এবং আত্মীয়, প্রতিবেশী ও নিপীড়িতকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজসেবক, সংস্কারক, ন্যায়বিচারক, ধর্মপ্রবর্তক ও সাম্রাজ্য স্থাপক। আরবের শতধা বিভক্ত, যুদ্ধরত বর্বর গোত্রগুলিকে সংঘবদ্ধ করে এক জাতি, এক রাষ্ট্র ও সর্বকালের উপযোগী এক পবিত্র অলঙ্ঘনীয় বিধান প্রতিষ্ঠা করে তিনি মানব সমাজকে নব জীবন দান করেন।

মহানবীর
আদর্শ জীবন

রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে মনীষীদের উক্তি



শুধু মুসলমানদের দৃষ্টিতেই নয়, মাইকেল হার্ট, আলফ্রেড দ্য লামার্টিন, জন উইলিয়ম ড্রেপার, জর্জ বার্নার্ড শ’ প্রমুখ অসংখ্য অমুসলিম মনীষী কর্তৃক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সফলকাম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন।

বিশ্বমনীষার শীর্ষতম শিখরে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অবস্থানের স্বীকৃতি প্রদানপূর্বক মাইকেল হার্ট তার “দি হানড্রেড” গ্রন্থে দ্বিধাহীনচিত্তে উল্লেখ করেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের তালিকায় শীর্ষদেশে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে স্থাপনে আমার সিদ্ধান্ত বহু পাঠককে বিস্মিত করতে পারে এবং অনেকের নিকটই তা প্রশ্নাধীন হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ উভয় পর্যায়ে চরমভাবে সফলকাম ছিলেন। ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতার এই অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন সংমিশ্রণই তাঁকে ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তি রূপে পরিচিহ্নিত করে।”

বিশ্ব মনীষার শ্রীবৃদ্ধি ও সৌকর্য সাধনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবদান অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে মনীষী আলফ্রেড দ্য ল্যামার্টিন-এর অমর উক্তি প্রণিধানযোগ্য-

“দার্শনিক, বাগ্মী, রাসুল, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, মতবাদ বিজয়ী, ধর্ম মতের এবং প্রতিমাহীন উপাসনা পদ্ধতির পুনঃসংস্থাপক, উদ্ধারকারী, নিরাকারের ইবাদত আনয়নকারী মুহাম্মদ (সাঃ) বিশটি পার্থিব এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকারী।”

মানুষের মহত্ত্ব পরিমাপের সকল মানদন্ড জড়ো করে আমাদের নিকট জিজ্ঞাসা- “তাঁর চেয়ে মহত্ত্বর কোনো মানুষ আছে কি?” ইউরোপীয় মনীষার উত্তরণেও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আদর্শের প্রভাব সর্বজনস্বীকৃত। জন উইলিয়ম ড্রেপার নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করেছেন যে, “রেনেসাঁর জন্ম হয়েছে ইসলামের দরুণ”।

মনীষী বার্নার্ড শ’ বলেছেন, “আমি ভবিষ্যতবাণী করছি যে, আগামীতে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্ম ইউরোপের নিকট গ্রহণীয় হবে।” [এ.এইচ.এম. মুজতবা হোছাইন ও সৈয়দ আশরাফ আলী]

মহানবীর
আদর্শ জীবন

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মু’জেযা (অলৌকিকত্ব)



আরবী মু’জেযা শব্দের অর্থ অসাধারণ বিষয়, অলৌকিকত্ব। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অসংখ্য মু’জেযার মধ্যে প্রকাশ্য মু’জেযার সংখ্যা দশ হাজারেরও অধিক। ব্যাখ্যাকারীগণ হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মু’জেযাগুলোকে তিনভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন।

প্রথমত, যা তাঁর দেহ হতে বহির্ভূত। যথা- চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া, বৃক্ষ নিকটে আসা, উট ও হরিণের অভিযোগ ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, যা তাঁর দেহসম্পৃক্ত যথা- ‘মহরে নবুওয়াত’ যা হলো দুই কাঁধের মাঝখানে আল্লাহর রাসূল মোহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাক্যটি লেখা ছিল মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

তৃতীয়ত, তাঁর নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলী যথা- সৎ, নির্ভীক, অকুতোভয়, দানশীল, সত্য ভাষণকারী ইত্যাদি।

আল কোরানের সূরা ক্বামারে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আংগুল দ্বারা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে।

বদর যুদ্ধের আগের দিন বদর নামক স্থানে পৌঁছে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটা আমুকের শাহাদাতের স্থান, এটা অমুকের (কাফেরের) হত্যার স্থান...’ সাহাবীরা (রাঃ) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জন্য যে স্থান দেখিয়েছেন, তার সামান্য এদিক সেদিক হয়নি।’ (মুসলিম)

বিভিন্ন যুদ্ধে আকাশের ফেরেশতাগণ অংশগ্রহণ করতো। এটি আল্লাহর সাহায্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মু’জেযার প্রমাণ। হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন- ‘উহুদের যুদ্ধের দিন আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ডানে বামে সাদা পোশাকের দু’জনকে (জিব্রাইল, মিকাইল) দেখলাম যাদেরকে আর কোন দিন দেখিনি।’ (বুখারী, মুসলিম)

সাহাবীর ভাংগা পা হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্পর্শে ভালো হওয়া আরো একটি মু’জেযা। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাঃ) এর পা ভেংগে গেলে তিনি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে জানালে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পায়ের উপর হাত বুলালেন। সাহাবী বলেন- ‘এতে আমার পা এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলো যেন তাতে আমি কখনো আঘাতই পাইনি।’ (বুখারী)

স্বল্প খাদ্যে হাজার মানুষের পরিতৃপ্ত ভোজন হওয়া প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উল্লেখযোগ্য মু’জেযা। এরুপ বহু ঘটনা বহু সাহাবী বর্ণনা করেছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ ক্ষুধায় অস্থির ও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, তখন জাবের (রাঃ) একটি বকরীর বাচ্চা জবাই করলেন আর এক সা’ পরিমাণ জবের রুটি তৈরি করলেন আর তা দিয়েই সবাই তৃপ্তিতে খেলেন। সাহাবী জাবের (রাঃ) আল্লাহর শপথ করে বলেন- ‘সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও চুলায় গোশত ভর্তি ডেকচি ফুটছিল এবং রুটি হচ্ছিল।’ (বুখারী, মুসলিম)

Info

'মহানবীর আদর্শ জীবন' ডেভেলপার টীম বিডিওয়াপমাস্টার কর্তৃক প্রকাশিত একটি ইসলামী শিক্ষামূলক ব্লগ। সাইটটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে এই সাইটটি শেয়ার করতে পারেন।

আপনাদের কোন প্রশ্ন কিংবা অভিযোগ থাকলে মেইল করুন kendua.com@gmail.com